শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন
রাশেদুল কবির অনু সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ॥
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরায় ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ১ জুলাই। এ ঘটনায় দেশি-বিদেশি ২০জন নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করে সশস্ত্র জঙ্গিরা। পৈচাশিক ওই ঘটনায় জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও মারা যান।
নিহত ২০জনের মধ্যে একজন হলো হলি আর্টিজানের ডিশ ক্লিনার হিসেবে কর্মরত জাকির হোসেন শাওন (১৮)। ৮জুলাই (শুক্রবার) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শাওন। শাওনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল দক্ষিণ নয়াপাড়া এলাকায়। বুধবার হলি আর্টিজান মামলার রায় প্রকাশের পর নিহত শাওনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বসে আছে মা মাকসুদা বেগম। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে চোখ মুছতে মুছতে ঘরের ভেতর থেকে চেয়ার এনে বসতে দিলেন। শুরুতে ছেলের স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন কথা শেয়ার করছিলেন এই প্রতিবেদকের সাথে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে বুধবার (২৭ নভেম্বর) হলি আর্টিজান মামলার রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শাওনের মা জানায়, টিভিতে দেখলাম ৭জনের ফাঁসি অইছে। অপরাধ করছে অপরাধিরা। তাদের শাস্তিও অইছে। আমরা অপরাধিদের শাস্তি অয়াতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। তয় আমার নিরপরাধ পোলাডা মরলো। হেইডা মনে অইলে বুকটা ফাইট্টা যায়।
মামলার রায়ে একদিকে যেমন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে হলি আর্টিজানের কর্মচারি নিহত শাওনের বাবা-মা তেমনি কোথায় যেনো একটু চাপা ক্ষোভও রয়েছে তাদের। নিহত শাওনের বাবা আব্দুস সাত্তার মিয়া বলেন, শাওনের মৃত্যুর আগে তার মা পিঠা বিক্রি করতো। পাশাপাশি শাওনের উপর্জন দিয়ে সংসার ভালই চলছিলো। তার মৃত্যুর পর তারা দুজনেই শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে ছেলের চিন্তায়। শাওনের মা হার্টের রোগে আক্রান্ত। তাই সে এখন আর পিঠাও বিক্রি করতে পারে না। তিনিও আগের মতো কাজ করতে পারেন না। শাওনসহ তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। ভাইয়ের মৃত্যুর পর ভাই-বোন সবাই ভেঙ্গে পরেছে। সন্তানদের মধ্যে শাওন ছিলো দ্বিতীয় এবং ছোট বড় সব ভাইবোনদের আদর ও সম্মানের। ভাইয়ের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে বোন সোনিয়া পড়ালেখা ছেড়ে গার্মেন্টে চাকুরি নিয়েছে। সবার ছোট আরাফাত শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধি। তার বা হাতের একটি আঙ্গুলও নেই জন্ম থেকে। এমন অবস্থাতেও সে ওয়ার্কশপে কাজ শিখছে। আরেক ছেলে আব্দুল্লাহ গোদনাইল বার্মাস্ট্যান্ডে ট্যাংকলড়িতে কাজ করে। তাও নিয়মিত নয়। গাড়ির ট্রিপ হলে আয় আছে আর না হলে নাই। আর শাওনের বাবা এই বয়সে নৈশ প্রহরির কাজ করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছেন। শাওন নিহত হওয়ার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে কেউ তার পরিবারের খোজঁ নেয়নি বলে জানান তার বাবা। সরকারি-বেসরকারি কোন সংস্থা থেকেও কোন রকম সহায়তাও পায়নি পরিবারটি। এক কথায় চরম দুরবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে হলি আর্টিজানের ডিশ ক্লিনার নিহত জাকির হোসেন শাওনের পরিবার।
এদিকে শাওনের বিরুদ্ধে কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোন অভিযোগ পায়নি মামলাটি তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।